সামনেই আসছে দুর্গাপুজো। সেই পুরাকাল থেকে আজও দেবীর মূর্তি তৈরিতে প্রয়োজন হয় পতিতালয়ের মাটি। একদিকে পবিত্রতা ,শুভ্রতার, প্রতিমূর্তি মা দূর্গা, অন্যদিকে তার মূর্তি তৈরিতেই প্রয়োজন হয় তথাকথিত, ‘অশুচি ‘,’অপবিত্র’ এলাকার মাটির। পুজোর কয়েক মাস আগে থেকেই কুমোরটুলিতে ব্যস্ততা তুঙ্গে থাকে। কাদামাখা শিল্পীর হাত থামতেই চায় না। মা দুর্গার প্রতিমা তৈরীর কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। মা দুর্গার এই প্রতিমা তৈরিতে যে পতিতালয়ের মাটি লাগে এটা সকলেরই জানা কিন্তু কেন এই মাটির প্রয়োজন হয় মা দুর্গার মূর্তি তৈরি করতে তা হয়তো অনেকেরই অজানা।
মোট ৯টি কন্যা রূপ রয়েছে মহামায়ার। যথা- কাপালিক, ধোপানি, নর্তকি ,নাপিতানি, ব্রাহ্মণী ,শূদ্রানি ,গোয়ালিনী ,মালিনী ও পতিতা। দেবীর নবম রূপটি আসলে পতিতালয়ের প্রতিনিধি, সেই কারণেই এই রীতির জন্ম হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। তাই মায়ের মূর্তি তৈরির জন্য পতিতালয়ের থেকে মাটি আনতে হয়। প্রতিদিন রাতে ভিন্ন ভিন্ন পুরুষের সঙ্গে রাত কাটিয়ে আসা পতিতারা সমাজের চোখে অশুচি কিন্তু দেবীর মূর্তি তৈরিতে সেই শ্রেণীর বাড়ি থেকেই নিয়ে আসা হয় মাটি।
শুচি- অশুচি ,উঁচু-নিচু বলে মায়ের কাছে কোন ভেদাভেদ নেই। মায়ের চোখে সবাই সমান। শাস্ত্র অনুযায়ী ,পতিতারা বেশ মর্যাদা সম্পন্ন মায়ের ত্রিনয়নে। মা দুর্গার মূর্তি তৈরির সময় কাঠামোর গায়ে পতিতালয়ের মাটি লেপতেই হবে। সম্পূর্ণভাবে না হলেও আংশিকভাবে হলেও সেই মাটি মায়ের প্রতিমা তৈরিতে থাকতেই হবে। শাস্ত্রে বলা হয়েছে ,নিজেদের অবিশুদ্ধ করে পতিতারা সমাজকে বিশুদ্ধ রাখে।
পুরানেও এই বিষয়টি নিয়ে একটি কাহিনী আছে। সেটি হল, বিশ্বামিত্র ঋষি যখন ইন্দ্রত্ব লাভের আশায় কঠোর থেকে কঠোরতর তপস্যা করেছিলেন। তখন তার ধ্যান ভঙ্গ করার উদ্দেশ্যে সুন্দরী অপ্সরা পাঠিয়েছিলেন তাঁর কাছে। এক অপ্সরা তাঁর ধ্যান ভঙ্গ করতে সক্ষমতা লাভ করেছিল। যে কাজটির মোটেই সরল ছিল না। এই ঘটনার পর থেকেই মা দুর্গার নবম রূপ প্রতিতার প্রতিরূপ। সারাবছর যারা সমাজের কাছে অপবিত্র অশুচি বলে অবহেলায় পড়ে থাকে মহামায়ার পুজোর দিনগুলোয় তারাই সমাজে পুজিত হয় দেবীরূপে।