টলিউডের অন্যতম এক জনপ্রিয় অভিনেত্রী মহুয়া রায়চৌধুরী(Mahua RoyChowdhury)। আজও তাঁর নাম উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতন জ্বলজ্বল করছে। তাঁর জীবন আজও সকলের কাছে অজানা রহস্য ঘেরা। কারণ মহুয়া মানেই সকলের কাছে অগ্নিদগ্ধ এক অভিনেত্রীর জীবনের রসালো গল্প।
তাঁর মৃত্যুর পর অনেকগুলি বছর অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে। প্রথমে শিপ্রা, তারপর সোনালী ও পরবর্তীতে মহুয়া, একই জীবনে একাধিক সত্ত্বা হয়ে বেঁচেছেন তিনি। ছোট্ট মহুয়া কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁর বাবা নীলাঞ্জন রায়চৌধুরী তাঁকে মঞ্চে তুলে দিয়েছিলেন। তিনি কখনো মেয়েকে অভিনেত্রী বানাতে চাননি। তিনি চেয়েছিলেন মহুয়া রোজগারে সংসার চালাতে। একটা সময় কলকাতার বিভিন্ন মঞ্চের
নৃত্যানুষ্ঠান করতে করতে শিপ্রা হয়ে উঠল সোনালী। মহুয়ার বাবা তাঁকে মঞ্চ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মহুয়ার ভাগ্যে অন্য কিছুই লেখা ছিল। পরিচালক তরুণ মজুমদার তাঁর ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’ ছবিতে তাঁকে ছাড়া অন্য কাউকে মানতেই চাইছিলেন না। তবে তরুণ মজুমদারের সোনালী নামটি পছন্দ হলো না। তাই তিনি তাঁর নাম রাখলেন মহুয়া।
১৯৭২ সালে মুক্তি পেল ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’। এই ছবিতে অভিনয় করে সকলের নজর কাড়লেন মহুয়া। এই ছবির মুক্তির পরই রাতারাতি স্টার হয়ে উঠলেন মহুয়া। মহুয়া মহানায়ক উত্তম কুমারের সাথে স্ক্রিন শেয়ার করেছিলেন। এরপর একের পর এক হিট ছবিতে অভিনয় করে দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছিলেন তিনি।
মহুয়া যতই তাঁর ক্যারিয়ারের শিখরে ঊর্ধ্বগামী হচ্ছিলেন, ততই বিপন্ন হয়ে উঠছিল তাঁর পারিবারিক জীবন। অভিনয় জগতে মহুয়া যাদের সবথেকে বেশি বিশ্বাস করতেন, তারাই তাঁর নামে রটিয়েছিলেন পরকীয়ার গুঞ্জন। এক সময় মহুয়ার কাছে বোম্বে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকেও কাজ করার সুযোগ আসতে শুরু করেছিল। এমনকি বাংলাদেশেও ধীরে ধীরে তার জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছিল।
তবে বাংলাদেশে কাজ করার জন্য ভারতীয় নাগরিক মহুয়ার প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের অনুমতি। সেই চিঠিও এসে পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু তখন তিনি অগ্নিদগ্ধ হয়ে কলকাতা হাসপাতালে ভর্তি। তিনি মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করতে করতেও ভোলেননি।
মহুয়া খুব ভালো করেই জানতেন এই লড়াইয়ে তিনি জয়ী হয়ে ফিরতে পারবেন না। এই কারণে মহুয়ার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী, তাঁর অগ্নিদগ্ধ মৃতদেহ কাউকে দেখতে দেওয়া হয়নি। মহুয়া এখনো তাঁর অনুরাগীদের কাছে জীবন্ত। রূপসী ও গুণবতী অভিনেত্রী হিসেবে অগণিত অনুরাগীদের মনের মনিকোঠায় আজও মহুয়ার মিষ্টিমুখটাই অমলিন।